Friday, October 9, 2015

কাশফুলের কাব্য - নির্মলেন্দু গুণ

ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন ফুটবে তোমায় দেখব,
তোমার পুষ্প বনের গাঁথা মনের মত লেখব

তখন কালো কাজল মেঘ তো ব্যস্ত ছিল ছুটতে,
ভেবেছিলাম আরো 'দিন যাবে তোমার ফুটতে

সবে তো এই বর্ষা গেল শরত এলো মাত্র,
এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরলো তোমার গাত্র

ক্ষেতের আলে নদীর কুলে পুকুরের ওই পাড়টায়,
হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়

আকাশ থাকে মুখ নামিয়ে মাটির দিকে নুয়ে,
দেখি ভোরের বাতাসে কাশ দুলছে মাটি ছুঁয়ে

কিন্তু কখন ফুটেছে তা কেউ পারে না বলতে,
সবাই শুধু থমকে দাঁড়ায় গাঁয়ের পথে চলতে

উচ্চ দোলা পাখির মত কাশ বনে এক কণ্বে,
তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে

শরত রানী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে,
কাশ বনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে দুলে

প্রথম কবে ফুটেছে কাশ সেই শুধুরা জানে,
তাইতো সেটা সবার আগে খোঁপায় বেঁধে আনে

ইচ্ছে করে ডেকে বলি, ওগো কাশের মেয়ে-
"
আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে
তোমার হাতে বন্ধী আমার ভালবাসার কাশ
তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস"

ভালবাসা কাব্য শুনে কাশ ঝরেছে যেই
দেখি আমার শরত রানী কাশবনে আর নেই

Thursday, April 9, 2015

বৈশাখের নাগরদোলায় _রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

আঁকড়ে থেকো না কিছু।
যে যাবার তাকে যেতে দাও
______________যে ফেরার সেতো ফিরবেই-
কলমি লতার ফ্ল্যাটে ফিরে যাবে হলুদাভ হাঁস,

তুমি সভ্যতার নাগরদোলায়
___________________দাঁড়িয়ে চিৎকার করো:
বর্নময় ভালোবাসা তুমি খুলে যাও
নীল পিরামিড তুমি খুলে যাও তোমার দরোজা।

তুমি প‘ড়ে থাকো
সময়ের বুটে পেষা বাম হাত তুমি
জীনে জীনে র্জীন করো জীবনের জটিল যকৃত।

তোমার পেয়ালা উপচে পড়ুক সমকাল
এক টুকরো বরফ আর রাষ্ট্রনীতি
____________________ঔপনিবেশিক ভিত--

তোমার পেয়ালা উপচে পড়ুক ভালোবাসা,
ইটের নিসর্গে শুধু ঘাম, শুধু মেদ, প্রেম নেই,
অথবা অন্য কোনো নাম তার-
__________________অন্য কোন নাম?
কি নাম তোমার ভালোবাসা??

কবিতা: বৈশাখের নাগরদোলায়
_রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

(০৭ বৈশাখ ১৩৯৪ রাজাবাজার ঢাকা)

Thursday, March 5, 2015

পশ্চাতে হলুদ বাড়ি পঞ্চাশ লালবাগ --রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

এটা প্রস্থান নয়,বিচ্ছেদ নয়—শুধু এক শব্দহীন সবল অস্বীকার
পরিকল্পিত প্রত্যাখ্যান, এ কোনো অভিমান নয়...ব্যার্থতা নয়।
বিরহে কাতর হবে, কাতরতা বাড়াবে স্বাধীন স্বদেশ, জানতাম
আমার শূণ্য চেয়ারে হাত রেখে তাকাবে রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতিচিহ্ন বকুল এর দিকে,
প্রতিদিন ঘরে ফেরার পদশব্দ শুনতে চেয়ে অপেক্ষা সাজাবে ভেতরে,
জানতাম আমার না থাকা শরীর করতলে প্রদীপের মতো
জ্বলতে-জ্বলতে জ্বালাবে নদী, পাখি, ফুল, সংসারে সাজানো সবুজ—
তবু এ কোনো প্রস্থান নয়,এ কোনো বিচ্ছেদ নয়।
এখন যেখানে যতদুরে থাকি দ্যাখা না হওয়াই ভালো।
তোমার দেয়ালের পলেস্তারে ভেষে উঠুক যৌবন-হস্তা-শ্বাপদ
উঠোনে কৃষ্ণচূড়ায় মৌশুমি ফুলের উল্লাশে ঝ’রে যাক হলুদ মাটিতে
অথবা আরো কিছু নতুন বৃক্ষের ছায়ায় ধ্বনিময় হোক জীবন যাপন,
আরো কিছু হোক, আরো বেশি কিছু—পাওয়া বা পতন
তবু দ্যাখা না হওয়াই ভালো।
চ’লে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়—বিচ্ছেদ নয়,
চ’লে যাওয়া মানেই নয় বন্ধন ছিন্ন করা আদ্র রজনী।
চ’লে গেলে আমারো অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না থাকা জুড়ে।

Saturday, January 17, 2015

চাবি – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরঙ্গ আজ খোলো !

থুৎনি ‘পরে তিল তো তোমার আছে
এখন ? ও মন, নতুন দেশে যাবি ?
চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হলো ।

চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
রেখেছিলাম, আজই সময় হলো–
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
তোমার মুখ অশ্রু – ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরৎ চাহো কিনা ?





কিছু মায়া রয়ে গেলো-শক্তি চট্টোপাধ্যায়

সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত
জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে
কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,
শুধু এই
কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো
পৃথিবীকে।
মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,
শুধু এই
ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,
জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু

পাবো প্রেম কান পেতে রেখে-শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে সে আছো, দেবতা আমার
শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন
সম্ভ্রমের মূল কোথা -মাটির নিথর বিস্তারে ;
সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে ?
যেখানে শুইয়ে গেলে ধিরে-ধিরে কত দূরে আজ !
স্মারক বাগানখনি গাছ য়ে আমার ভিতরে
শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা
তোমাদের খোঁডা-বাসা শূন্য রে পলাতক হলো
আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার
পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো ? বুঝি ভুলে গেলে
নীলিমা ঔদাস্তে মনে পড়ে নাকো গোষ্ঠের সংকেত ;
দেবতা সুদূর বৃক্ষে, পাবো প্রেম কান পেতে রেখে